শ্রীমদ্ভগবদ গীতার পাঠবিধি ও মঙ্গলাচরণ


 শুদ্ধভাবে পূর্বমূখী বা উত্তরমূখী হইয়া আসনে বসিয়া প্রথমে আচরন করিবেন। তারপর বিষ্ণুস্মরন, স্বস্তিবাচন, সঙ্কল্প ও আসনাদি শুদ্ধি করিয়া নিম্নোক্ত মন্ত্রপাঠ করিবেন।


ঔঁ অস্য শ্রীমদ্ভগবদ্-গীতা মালামন্ত্রস্য শ্রীভগবান্ বেদব্যাসঃ 

ঋষিরনুষ্টপ্ ছন্দঃ শ্রীকৃষ্ণঃ পরমাত্না দেবতা 

অশৈাচ্যানম্বশোচস্তং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে ইতি বীজমং 

সর্বধর্মান পরিত্যাজ্য মামেকং শরণং ব্রজ ইতি শক্তিঃ 

অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ 

ইতি কীলকং শ্রীকৃষ্ণ প্রীত্যর্থং পাঠে বিনিয়োগ


(১) করন্যাস

এই মন্ত্রটি পাঠ করিয়া উভয় হস্তের অঙ্গুষ্ঠদ্বারা তর্জ্জনী স্পর্শ করিয়া পড়িবেন-

নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি।

নৈনং দহতি পাবকঃ  -ইতি অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ 

পুনরায় ঐরুপে তর্জ্জনী স্পর্শ করিয়া পড়িবেন-

ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো

ন শোষয়তি মারুতঃ -ইতি তর্জ্জনীভ্যাং স্বাহা 

তারপর উভয় হস্তের অঙ্গুষ্ঠদ্বারা মধ্যমা স্পর্শ করিয়া পড়িবেন-

অচ্ছেদ্যোহয়মদাহ্যোহয় মক্লেদ্যোহশোষ্য এব চ -ইতি মধ্যমাভ্যাং বৌষট্।

পরে উভয় হস্তের অঙ্গুষ্ঠদ্বারা অনামিকা স্পর্শ করিয়া পড়িবেন-

নিত্য সর্ব্বগতঃ স্থানুরচলোহয়ং সনাতনঃ -ইতি অনামিকাভ্যাং হুম

তারপরে উভয় হস্তের অঙ্গুষ্ঠদ্বারা কনিষ্ঠা স্পর্শ করিয়া পড়িবেন-

পশ্য মে পার্থ রুপাণি

শতশোহথ সহস্রশ্যঃ -ইতি কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্।

শেষে দক্ষিণ হস্তের করতল দ্বারা বাম হস্তের করতলকে স্পর্শ করিয়া পড়িবেন-

নানাবিধানিদিব্যানি নানাবর্ণাকৃতীনি চ -ইতি করতল পৃষ্ঠাভ্যাং মন্ত্রায় ফট্

(২) হৃদয়াদিন্যাস

তারপর হৃদয়াদিন্যাস করিবেন। যথা- নিম্মোক্ত মন্ত্রটি পড়িয়া দক্ষিণ হস্ত দ্বারা হৃদয় স্পর্শ করিবেন-

নৈনং ছিন্দন্তি শাস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ -ইতি হৃদয়ায় নমঃ।

তারপর হৃদয়াদিন্যাস করিবেন। যথা- নিম্মোক্ত মন্ত্রটি পড়িয়া দক্ষিণ হস্ত দ্বারা হৃদয় স্পর্শ করিবেন-

নৈনং ছিন্দন্তি শাস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ -ইতি হৃদয়ায় নমঃ।

পরে নীচের মন্ত্রটি পড়িয়া মস্তক স্পর্শ করিবেন-

ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ -ইতি শিরসে স্বাহা।

অতপর নিম্মোক্ত মন্ত্রটি পড়িয়া শিখা স্পর্শ করিবেন-

অচ্ছেদ্যোহয়মদাহ্যোহয় মক্লেদ্যোহশোষ্য এব চ -ইতি শিখায়ৈ বৌষট্

তারপরে নিম্মলিখিত মন্ত্র পড়িয়া কবচ স্পর্শ করিবেন-

নিত্যঃ সর্ব্বগতঃ স্থাণু রচলোহয়ং সনাতনঃ -ইতি কবচায় হুম্।

শেষে নেত্রদ্বয় ও ভ্রু মধ্য স্পর্শ করিয়া নিম্মোক্ত মন্ত্রটি পড়িবেন-

পশ্য মে পার্থরুপাণি শতশোহুথ সহস্রশ -ইতি নেত্রয়ায় বৌষট্।

নানাবিধানি দিব্যানি নানাবর্ণাকৃতানি চ -ইতি অস্ত্রায় ফট

পড়িয়া হাত তালি দিবেন।

তারপর অঙ্গন্যাস করিয়া গনেশ, পঞ্চদেবতা ও শ্রীকৃষ্ণের পূজা করিবেন।


মঙ্গলাচরণ শ্লোকগুলিঃ-

শ্লোক সরলার্থ
পার্থায় প্রতিবোধিতাং ভগবতা নারায়ণেন স্বয়ম্ ব্যাসেন গ্রথিতাং পুরাণমুনিনা মধ্যে মহাভারতম্৷ অদ্বৈতামৃতবর্ষিণীং ভগবতীমষ্টাদশাধ্যায়িনীম্ অম্ব ত্বামনুসন্দধামি ভগবদ্ গীতে ভবদ্বেষিণীম্ -১ হে জননি ভগবদ্ গীতে মহাভারতের মধ্যে প্রাচীন মুনি ব্যাসদেবকর্তৃক গ্রথিত, স্বয়ং ভগবান নারায়ণকর্তৃক পার্থকে উপলক্ষ্য করে সম্যক্ রূপে বিজ্ঞাপিত, পুনর্জন্মনাশকারিণী অদ্বৈত তত্ত্বরূপ-অমৃতবর্ষিণী অষ্টাদশ-অধ্যায়রূপিণী ভগবতী তোমাকে আমি মনে মনে চিন্তা করিতেছি -১
নমোহস্তু তে ব্যাস বিশালবুদ্ধে ফুল্লারবিন্দায়্তপত্রনেত্র৷ যেন ত্বয়া ভারততৈলপূর্ণঃ প্রজ্বালিতো জ্ঞানময়ঃ প্রদীপঃ -২ হে বিকশিত পদ্মপত্রের ন্যায় চক্ষুবিশিষ্ট মহাবুদ্ধি ব্যাসদেব, তোমায় নমস্কার, তোমাকর্তৃক মহাভারতরূপ তৈলদ্বারা পরিপূর্ণ জ্ঞানময় প্রদীপ প্রজ্বালিত হয়েছে -২
প্রপন্ন পারিজাতায় তোত্রবেত্রৈকপাণয়ে৷ জ্ঞানমুদ্রায় কৃষ্ণায় গীতামৃতদুহে নমঃ -৩ শরণাগতের পক্ষে পারিজাত (কল্পবৃক্ষ) তুল্য, অশ্বচালনার জন্য এক হস্তে চাবুক ও লাগামধারী, জ্ঞানমুদ্রাবিশিষ্ট-হস্ত [অর্জুনকে উপদেশ দিবার জন্য তর্জনী ও অঙ্গুষ্ঠাঙ্গুলি মিলিত করে যে মুদ্রা তা-ই জ্ঞানমুদ্রা ], গীতারূপ অমৃত দোহনকারী শ্রীকৃষ্ণকে নমস্কার -৩
সর্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ -৪ উপনিষদসকল গাভীস্বরূপ গোপালনন্দন শ্রীকৃষ্ণ দোহনকর্তা, অর্জুন বৎস (বাছুর) তুল্য, গীতার অমৃতরূপ বাণী উৎকৃষ্ট দুগ্ধসদৃশ, পণ্ডিতব্যক্তিগণ এ দুগ্ধ পানকর্তা -৪
বসুদেবসুতং দেবং কংসচাণূরমর্দনম্৷ দেবকীপরমানন্দং কৃষ্ণং বন্দে জগদ্ গুরুম্ -৫ বসুদেবের পুত্র, কংস ও চাণূর দৈত্যের বিনাশকারী, দেবকীর পরম আনন্দপ্রদ, জগদ্ গুরু দীপ্তিমান্ শ্রীকৃষ্ণকে বন্দনা করি -৫
ভীষ্মদ্রোণতটা জয়দ্রথজলা গান্ধারনীলোপলা শল্যগ্রাহবতী কৃপেণ বহনী কর্ণেন বেলাকুলা৷ অশ্বথামবিকর্ণঘোরমকরা দুর্যোধনাবর্তিনী সৌত্তীর্ণা খলু পাণ্ডবৈ রণনদী কৈবর্তকে কেশবে -৬ ভীষ্ম ও দ্রোণ যে যুদ্ধরূপ নদের তট, জয়দ্রথ যার জল, গান্ধার (গান্ধার-রাজ-শকুনী) যাতে পিচ্ছিল নীলপ্রস্তর, শল্য যাতে কুমীর, কৃপাচার্য যাতে প্রবাহস্বরূপ, কর্ণ যার তীরপ্লাবী তরঙ্গ, অশ্বথামা ও বিকর্ণ যাতে ভীষণ মকরসদৃশ, দুর্যোধন যার আবর্ত সেই রণনদী কেশব কর্ণধার হওয়ায় পাণ্ডবেরা নিশ্চিতরূপে উত্তীর্ণ হয়েছে -৬
পারাশর্যবচঃসরোজমমলং গীতার্থগন্ধোৎকটং নানাখ্যানককেশরং হরিকথাসম্বোধনাবধিতম্ ৷ লোকে সজ্জনষট্ পদৈরহরহঃ পেপীয়মানং মুদা ভূয়াদ্ভারতপঙ্কজং কলিমলপ্রধ্বংসি নঃ শেয়সে -৭ অমল কলিকলুষনাশক গীতার উপদেশরূপ সুগন্ধযুক্ত, নানা আখ্যানরূপ কেশরবিশিষ্ট, শ্রীকৃষ্ণের বাণীদ্বারা প্রবোধিত, জগতে সর্বদা সজ্জনরূপ ভ্রমরগণ কর্তৃক সানন্দে পুনঃপুনঃ পীয়্মান, পরাশরনন্দন বেদব্যাসের বাক্য-সরোবরে উৎপন্ন মহাভারতরূপ পদ্ম আমাদের কল্যাণের নিমিত্ত হোক -৭
মূকং করোতি বাচালং পঙ্গুং লঙ্ঘয়তে গিরিম্৷ যৎকৃপা তমহং বন্দে পরমানন্দমাধবম্ -৮ যাঁর কৃপা বোবাকে বাচাল করে, পঙ্গুকে পর্বত অতিক্রম করায়, সেই পরমানন্দ মাধবকে আমি বন্দনা করি -৮
যং ব্রহ্মাবরুণেন্দ্ররুদ্রমরুতঃ স্তুন্বন্তি দিব্যৈইঃ স্তবৈ- র্বেদ্যৈইঃ সাঙ্গপদক্রমোপনিষদৈর্গায়ন্তি যং সামগাঃ ধ্যানাবস্থিত-তদ্ গতেন মনসা পশ্যন্তি যং যোগিনো যস্যান্তং ন বিদুঃ সুরগণা দেবায় তস্মৈ নমঃ -৯ ব্রহ্মা, বরুণ, ইন্দ্র, রুদ্র, ও মরুৎগণ দিব্য স্তবদ্বারা যাঁকে স্তুতি করেন, সামবেদগায়কগণ অঙ্গ, পদক্রম ও উপনিষদসহ সমগ্র বেদদ্বারা যাঁর স্তুতিগান করেন, যোগিগণ ধ্যানাবস্থিত তদ্ গতচিত্তে যাঁকে দর্শন করেন, দেবতা ও অসুরগণ যাঁর শেষ জানেন না, সেই দেবতাকে নমস্কার -৯


মঙ্গলাচরণ - বাংলা

পার্থে প্রবোধিতে কৃষ্ণ জগৎ কারণ।
কুরুক্ষেত্রে গীতাশাস্ত্র করেন কীর্তণ।।
ব্যাস তাহা করিলেন জগতে প্রকাশ।
ব্যাখ্যা করি প্রচারিতে আমার প্রয়াস।।
আশ্রিতের কল্পতরু দেবকীনন্দন।
কৃপা করি মোরে কর দয়া বরির্ষন।।
গীতার উদ্দিষ্ট তুমি সর্বতত্ত্বসার।
প্রণাম তোমা পদে
Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url